রামজন্মভূমি আন্দোলন--ভারতীয় অস্মিতা রক্ষার সংগ্রাম



যদি দেশের ভুমিখণ্ড কেউ জোর করে ছিনিয়ে নেয় তাকে শৌর্যের দ্বারা আবার ফিরিয়ে আনা যায়।যদি ধনসম্পত্তি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে পরিশ্রম করে তা উপার্জন  করা যায়।যদি রাজসত্তা কেউ জোর করে কেড়ে নেয় তাহলে পরাক্রম দ্বারা আবার ফিরিয়ে আনা যায়।যদি রাষ্ট্রীয় চেতনা সমাপ্ত হয়ে যায়,রাষ্ট্রীয় গৌরব লুপ্ত হয়ে যায় তাহলে শৌর্য,পরিশ্রম,পরাক্রম তাকে ফিরিয়ে আনতে পারে না।সেই জন্য ভারতীয় বীর-সন্তানরা ভীষণ বিষম পরিস্থিতিতেও,হাজার অসুবিধার মধ্যে রাষ্ট্রীয় এই অস্মিতা রক্ষার জন্য চেষ্টা করেছিলেন।গো-গীতা-গঙ্গা-গায়ত্রী-মঠ মন্দির,সাধু-সন্ত,দেবী-দেবতা হলো ভারতীয় অস্মিতার প্রতীক।এখানে জন্মগ্রহণ করে অনেক অবতার ও মহাপুরুষ কেবলমাত্র এই দেশ ও দেশবাসীকে গর্বিত করেননি ,নিজে ধন্য হয়েছেন।এমনই একজন মহামানব ছিলেন মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম।
একসময় যা কেবল হিন্দুর আস্থা ও শ্রদ্ধার বিষয় ছিল তাকে আইনি লড়াইয়ের মধ্যে টেনে আনা হলো।যা কখনও কোনো দেশে হয়নি--না ইসরাইল, না জর্ডন,না স্পেন ----যেখানে আস্থা নিয়ে সংঘর্ষ প্রথম থেকেই ছিল।আজও চলছে।সেখানে তো কোনো কোর্ট-কাছারি হয়নি।আমাদের দেশের নেতৃত্বে কেন বার বার কোর্টের দোহাই দিচ্ছেন?অযোধ্যায় শ্রীরাম জন্মভূমি কোটি কোটি হিন্দুর আস্থা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে যুক্ত ----অন্য কোনো সম্প্রদায়ের নয়।অতএব সব সময় তাকে সম্মান দেওয়ার আবশ্যকতা ছিল,কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মধ্যযুগে এক সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতা তার উপর নির্মম আঘাত হানল।হাজার হাজার
 বছরের ,কোটি কোটি মানুষের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের উপর এক কলঙ্ক চিহ্ন এঁকে দিল।বাবরের সেনাপতি মিরবাকি অযোধ্যার মন্দির ভেঙে এক মসজিদের ধাঁচা নির্মাণ করে দিল।এক হাতে কোরান আর এক হাতে তলোয়ার নিয়ে ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার হতে লাগল।মন্দির ভেঙে মসজিদ হতে লাগল।ধর্মভিত্তিক দ্বি জাতি তত্ত্বের  জন্ম নিল।ঘৃণা থেকে প্রতিশোধের বীজ জন্মায়।শ্রীরাম জন্মভূমির ইতিহাস এইরূপ আস্থা-বিশ্বাস এবং প্রতিশোধের এক দীর্ঘ কাহিনি।
১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত বাবরি ধাঁচার পূর্বে ওই স্থানে মন্দির ছিল তা আজ প্রমাণিত হয়েছে।আদালতের আদেশে কানাডার একটি বিশেষজ্ঞ দল রাডার  পর্যবেক্ষণ এবং পরে মাটি কেটে উৎক্ষননে প্রাচীন মন্দিরের নিদর্শন প্রমাণ করে ওই স্থানটি শ্রীরামজন্মস্থান।১৫২৮ সাল ১৯৪৯ পর্যন্ত মন্দির পুননির্মানের জন্য ৭৬ বার যুদ্ধের ঘটনা ইতিহাসে উল্লেখ পাওয়া যায়।রাজা থেকে সন্ন্যাসী, সাধারণ মানুষ এই যুদ্ধগুলিতে যোগ দিয়েছিলেন।১৮৩৪ সালে অযোধ্যার বৈরাগীদের দ্বারা শেষ বড় সংঘর্ষের পর আর কখনও ওই স্থানে নামাজ পড়া হয়নি।১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর আমির আলির নেতৃত্বে অযোধ্যার স্থানীয় মুসলমান সমাজ ওই স্থানটি হিন্দুদের ছেড়ে দিতে রাজি হয়।বাবা রাঘবদাস হিন্দুদের প্রতিনিধি হয়ে মুসলমানদের সঙ্গে কথা বলেন।কিন্তু চতুর ইংরেজ হিন্দু -মুসলমানের এই বিবাদ স্থায়ী করার চক্রান্তে ওই দুজন কে ফাঁসিকাঠে চড়ায়।সমস্যা সমাধানের চেষ্টা ওখানেই থেমে যায়।১৯৪৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর থেকে রামভক্তরা ওই সৌধের মধ্যে শ্রীরামচন্দ্রের পূজা অর্চনা শুরু করে দেয়।
 সরকারি বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও নিত্য পূজা আরতি চলে।সরকারি সুরক্ষার মাধ্যমে তালাবন্ধ অবস্থার রামলালার দর্শন ও পূজা চলতে থাকে।১৯৮৪ সালের অক্টোবর মাসে "শ্রীরাম জানকী রথ" যাত্রার মাধ্যমে জনজাগরণ আরম্ভ হয়।জনতার দাবিতে ১৯৮৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তালা খুলে দেওয়া হয়।১৯৯০ সালে করসেবা এবং '৯২ -এ ২ লক্ষ করসেবকের আক্রোশে পুরাতন ধাঁচা ধূলিসাৎ হয়।পরবর্তী ঘটনা কমবেশি সকলের জানা।২৫ বছর ধরে ভগবান রামলালা অযোধ্যায় কাপড়ের তাঁবুতে বিরাজমান রয়েছেন।
স্বাধীনতার ৭০ দশক পরেও হিন্দু অস্মিতা মেকি ধর্মনিরপেক্ষতার ফাঁস থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু রাজনীতির বিষবাষ্পে জর্জরিত।রামমন্দির নির্মাণের  বাধা হিন্দু জাতীয়তাবোধের উপর সরাসরি প্রহার।দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ খণ্ডিত হওয়ার পর পাশাপাশি দুটি রাষ্ট্রের জন্ম নিল কিন্তু ভারত এখনও ধর্মীয় স্বাধীনতা পেল না।রাজনৈতিক স্বাধীনতা আমরা কেবল লাভ করেছি।অযোধ্যার শ্রীরাম মন্দির নির্মাণ কেবল একটা মন্দির নির্মাণ নয়---ধর্মীয় স্বাধীনতা আন্দোলন।স্বাধীন ভারতবর্ষে 'জয় শ্রী রাম' ধ্বনি নতুন স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজমন্ত্র।ভগবান শ্রী রামচন্দ্র রাষ্ট্রীয় অস্মিতার প্রতীক।তবু কেন---কি কারণে অযোধ্যায় ভব্য রামমন্দির নির্মাণ হচ্ছে না--বাধা কোথায়?ভারতবর্ষের নাগরিক অর্থাৎ ভোটার লিস্ট,রেশনকার্ড,আধার কার্ডে যাদের নাম আছে তারা কি সকলেই ভারতীয়?? ভারতবর্ষের নাগরিক হওয়ার জন্য এইটুকুই প্রমান পত্র হলে যথেষ্ট কি?দেশের প্রতি আনুগত্য ,পরম্পরার প্রতি শ্রদ্ধা ,মহাপুরুষ,দেব-দেবী,ধর্মগ্রন্থ, সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা আস্থা ও বিশ্বাসের কোনো প্রয়োজন আছে কিনা?উপাসনার দিক থেকে আলাদা হলেও রাষ্ট্রীয়তার দিক থেকে সমস্ত ভারতবাসীকে এক হতে হবে।প্রতীকী দিক থেকে  সমস্ত ভারতবাসীকে এক হতে হবে।প্রতীকী দিক থেকে রামমন্দিরের আন্দোলনের এটাই পটভূমি।
আজ ভারতে বসবাসকারী একাংশ মধ্যযুগীয় জেহাদি নরঘাতকদের আদর্শ করে জেহাদের পথে চলছে ও ভারতকে শত্রু রাষ্ট্র ভাবতে শিখেছে।এই পরিণামের পিছনে রামবিরোধীদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।এ জন্য রামমন্দির নির্মাণে কেবল জাতীয় সংহতির সুদৃঢ়ীকরণই হবে না,সেই সঙ্গে জেহাদি মানসিকতারও মূলে আঘাত হানা হবে।
বর্তমান কেন্দ্র সরকার রামভক্তদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে রামমন্দির নির্মাণের বাধাগুলি দূর করার জন্য তারা সচেষ্ট হবেন।২০১৯ সালে আবার লোকসভা নির্বাচন।মাঝখানে উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার চলছে।আগামী নভেম্বর মাসে কর্ণাটকের উডুপিতে ২৪-২৫-২৬ ধর্মসংসদ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং সারাদেশের প্রধান সন্তরা একত্রিত হচ্ছেন।
অযোধ্যাই রামমন্দির নির্মাণের পাথর কাটা এবং নকশা করার কাজ ৮৫ ভাগ হয়েছে।সোমনাথ মন্দির যে ভাবে আইন করে তৈরি হয়েছিল,রামমন্দির নির্মাণ সেইভাবে পালামেন্টের উভয়কক্ষের যৌথ অধিবেশন করে হোক--সমস্ত রামভক্তের এই প্রত্যাশা ।ধর্মসংসদের সিদ্ধান্তের জন্য দেশ অপেক্ষা করছে।মোদী ও যোগীর নেতৃত্বাধীন সরকারই পারে রামমন্দির নির্মাণের সব বাধা দূর করতে।ভগবান রামলালা আর কতকাল তাঁবুর তলায় থাকবেন।আসুন ,আমরা সবাই শ্রী রামজন্মভূমিতে মন্দির নির্মানের জন্য সংকল্পবদ্ধ হই।

Comments